শরীর কেন চুলকায়- এই রহস্য খুব কমই উদঘাটিত হয়েছে বা উদঘাটনের চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু চিকিৎসা বিজ্ঞানের এই দিকটি মানুষের মস্তিস্কের গতিবিধি বা আচরণ নিয়ে বিস্ময়কর কিছু তথ্য হাজির করেছে।
১. আপনি দিনে প্রায় ৯৭ বার সেখানে চুলকান: গবেষণা বলছে, আমরা দিনে কমবেশি ১০০ বার চুলকাই। এই লেখাটি যখন পড়ছেন, তখনও হয়তো আপনার শরীরের কোথাও চুলকাচ্ছে। চুলকে ফেলুন, কেউ দেখবে না।

২. পশু বা গাছের সংস্পর্শে চুলকানি কখনো কখনো কোনো পশু বা বৃক্ষ-লতার সংস্পর্শে শরীরে চুলকানি শুরু হয়ে যায়। এর কারণ এগুলো থেকে নিঃসরিত বিষ চামড়ায় লেগে হিস্টামিন নির্গত হয়। সাথে সাথে স্নায়ুকোষ তার ফাইবারের মাধ্যমে মস্তিস্কে চুলকানির বার্তা পাঠায়।

৩. চুলকানির নিজস্ব স্নায়ু নেটওয়ার্ক: কিছুদিন আগ পর্যন্ত মানুষের ধারণা ছিল, একই পথ দিয়ে চুলকানি এবং ব্যথার সিগন্যাল মস্তিষ্কে পৌছায়। কিন্তু ১৯৯৭ সালে এক গবেষণায় দেখা যায় চুলকানির স্নায়ুর ফাইবার পৃথক।

৪. চুলকানির সিগন্যালের গতি মন্থর: একেক স্নায়ু ফাইবারের একেক গতি: স্পর্শের সিগন্যালের গতি ঘণ্টায় ২০০ মাইল। দ্রুত ব্যথা (যখন আপনি অসাবধানে গরম হাড়িতে হাত দেন) ৮০ মাইল বেগে চলে। কিন্তু চুলকানির গতি ঘণ্টায় দুই মাইল- হাঁটার গতির চেয়ে মন্থর।

৫. চুলকানি সংক্রামিত হয়: ইঁদুররা চুলকাচ্ছে -এমন একটি ভিডিও আরেক দল ইঁদুরকে দেখিয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। দেখেই ঐ ইঁদুররা চুলকাতে শুরু করেছিল।

৬. সুপ্রাকিয়াসম্যাটিক নিউক্লিয়াস নামে মস্তিস্কের ক্ষুদ্র একটি অংশ চুলকানির সংক্রমণের জন্য দায়ী:বিজ্ঞানীদের এখনো কোনো ধারনা নেই যে কীভাবে মস্তিষ্ক একজনের চুলকানি দেখে আরেকজনকে চুলকাতে উৎসাহিত করে।

৭. চুলকিয়ে চামড়া রক্ষা করা যায়: কীট-পতঙ্গ বা বিষাক্ত লতাগুল্মের স্পর্শে প্রতিক্রিয়া হলে চুলকিয়ে তা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। চুলকানোর সময় আপনার রক্তের শিরা প্রসারিত হয়। ফলে নিঃসরিত হয় শ্বেত কনিকা যা বিষের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করে।

৮. মস্তিষ্কে সেরোটোনিনের নিঃসরণ: চুলকালে মস্তিষ্কে সেরোটোনিন নিঃসরিত হয়। ফলে পরিতৃপ্তির অনুভূতি হয়। বোঝাই যায়, কেন চুলকানির থামানো এত কঠিন।

৯. চুলকানোর সবচেয়ে উত্তম জায়গা গোড়ালি: ২০১২ সালে ব্রিটেনে এক গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, গোড়ালিতে চুলকানির ঝোঁক সবচেয়ে বেশি এবং সেখানে চুলকালে তৃপ্তিও পাওয়া যায় সবচেয়ে বেশি। গোড়ালি চুলকিয়ে দেখুন একবার।

১০. যত চুলকাবেন, ততই চুলকানি তৈরি হবে: চামড়ায় চুলকানোর সময় বেশি বেশি হিস্টামিন নিঃসরিত হয়। ফলে আরো চুলকাতে ইচ্ছা করে। এই চক্র সম্পর্কে সাবধান থাকুন। কারণ বেশি চুলকালে চামড়ায় ক্ষত তৈরি হয়, জীবাণুর সংক্রমণও হতে পারে।

শীত যাই যাই করছে। ঋতু বদলের এই সময়ে হাঁচি, কাশি, এলার্জিজনিত রোগ ব্যাধির প্রকোপ বেড়ে যাচ্ছে। এলার্জিজনিত সমস্যার কারণ কী- এ বিষয়ে বিস্তারিত বলেছেন বারডেম হাসপাতালের চর্মরোগ বিভাগের বিভাগীয়প্রধান ডাক্তার রেজা বিন জায়েদ। এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ১৯৪৪ পর্বে এই সাক্ষাৎকার প্রচারিত হয়।

প্রশ্ন :এই সময়ে হাঁচি, কাশি, এলার্জিজনিত রোগব্যাধির প্রকোপ বেড়ে যায় এর কারণ কী?

উত্তর : এ সময় অনেক দিন ধরে বৃষ্টি না হওয়ায় আবহাওয়ায় দূষণ শুরু হয়। কারণ শীতের প্রায় শেষে বাতাসে অনেক ধুলাবালি থাকে। এই ধুলাবালির সঙ্গে এলার্জেন মিশে থাকে। এই সময় এলার্জি হওয়ার বিভিন্ন উপাদান আমাদের শ্বাসনালির ভেতর ঢুকে যায় বা আমাদের ত্বকের ওপর বসে পড়ে। মোটকথা, বাতাসে আর্দ্রতা কম থাকার ফলে এলার্জির প্রকোপ বেড়ে যায়।

প্রশ্ন : হাঁচি, কাশির সঙ্গে এলার্জির এই সম্পর্ক কেন? কীভাবে ত্বকে বিভিন্ন উপসর্গের মাধ্যমে এটি প্রকাশ পায়?

উত্তর : আসলে হাঁচি, কাশি উপসর্গ মাত্র। এসব কিছুই এলার্জি সংক্রান্ত রোগ। আবার সব হাঁচি যে এলার্জি সংক্রান্ত তা-ও নয়। এ সময় সকালের দিকে অনেক হাঁচি হতে পারে। নাক দিয়ে হঠাৎ করে পানি পড়ে এবং কাশি হয়ে থাকে। অনেকের ত্বকে অযথাই চুলকানি শুরু হয়। এগুলো সবকিছুর উৎস একই, কেবল উপসর্গ ভিন্ন।

এই এলার্জি যখন নাকে যায় তখন নাকের ঝিল্লির ওপর বসে প্রতিক্রিয়া শুরু করে তখন হাঁচি শুরু হয়। যখন গলায় যায় তখন কাশি হয় এবং যখন ত্বকে এলার্জি হয় তখন এটি চুলকানি আকারে প্রকাশ পায়।

প্রশ্ন :এলার্জেন আসলে কোন কোন ক্ষেত্রের ওপর ( ফেক্টরের) নির্ভর করে। সবার ক্ষেত্রে তো একই রকম হয় না। সেটি কীভাবে বোঝা যাবে?

উত্তর : অতিসংবেদনশীলতা এলার্জির মূল কারণ। তবে এটি ব্যক্তি বিশেষে ভিন্ন রকম হয়। তবে এলার্জি শুধু যে এই সংবেদনশীলতার ওপর নির্ভর করে তা নয়।

এ ছাড়া আরো কারণ আছে। যেমন : আবহাওয়ায় কত পরিমাণ এলার্জির উপাদানগুলো ছড়িয়ে আছে তার ওপরও এই সমস্যা নির্ভর করে। আবহাওয়ায় এলার্জির উপাদান যত বাড়তে থাকে এই রোগের প্রকোপও তত বাড়তে থাকে।একটি শহরে যত বেশি দূষণ হবে মানুষ তত এলার্জির সমস্যায় ভুগবে।

তা ছাড়া আমাদের অনেক খাদ্যের উপাদানের মধ্যেও এলার্জেন আছে। অনেক খাদ্যের উপাদান এই এলার্জির জন্য দায়ী। তবে এটি ব্যক্তি ভেদে ভিন্ন রকম হয়ে থাকে।

প্রশ্ন :এলার্জিজনিত কারণে ত্বকের সমস্যা হলে সেটি বোঝার উপায় কী?

উত্তর : এলার্জির কারণে ত্বকের সমস্যা হলে হঠাৎ ত্বক লাল চাকার মতো ফুলে উঠে। এর সাথে অতিরিক্ত চুলকানি হয়। অনেক জায়গায় একত্রে হতে পারে বা নিদির্ষ্ট জায়গায়ও হতে পারে। তবে এই সমস্যা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। সাধারণত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এটা চলে যায়। ২৪ ঘণ্টার পর আবার ফিরে এসে ভিন্ন জায়গায় চুলকানি হয়।

বেশি কাশি হলে গলা বসে যেতে পারে। কাশতে কাশতে অনেক সময় ফেরিনজাইটিস হয়ে যায়। ফেরিনজাইটিস হলে গলা ব্যথার সমস্যা হয়।

প্রশ্ন : অনেক সময় ঠাণ্ডার কারণে এলার্জি, ধুলার কারণে এলার্জি এই বিষয়গুলো শুনে থাকি। এই বিষয়গুলো কী? হাঁচি,কাশির সঙ্গে এগুলোর কী সম্পর্ক রয়েছে?

উত্তর : এতক্ষণ যা আলোচনা হচ্ছিল সেগুলোর মধ্যে ধুলাবালি, বায়ু দূষণ সেগুলো সবই ছিল। কিন্তু আরো কিছু এলার্জি যেমন ঠাণ্ডা জনিত এলার্জি আছে, যেগুলো শীত হয় বা শীতের পর পর হয়। এ সময় শীত চলে গেছে ভেবে মানুষ অতটা গরম কাপড় পরে না। ফলে ঠাণ্ডা জনিত এলার্জি হয়।

অনেক ক্ষেত্রে আবার গরমের সময় গরম জনিত এলার্জি দেখা যায়। অতিরিক্ত গরম হলে ঘাম হয় শরীরে। ঘাম যদি তাড়াতাড়ি না শুকায় তাহলে একই ধরনের এলার্জি হয়। এ ক্ষেত্রেও রোগের উপসর্গ একই থাকে।

প্রশ্ন : খাবার থেকে অনেক সময় এলার্জি হয়। কোন ধরনের খাবারে এ ধরনের সমস্যা হয়?

উত্তর : অনেকেই ভাবে খাবারের এলার্জি কেবল নির্দিষ্ট খাবারেই হয়। সাধারণত ভাবা হয়, গরুর মাংস, ইলিশ মাছ, চিংড়ি মাছ- এসব খাবার খেলে এলার্জি হয়। তবে এগুলো সঠিক নয়। ব্যক্তি বিশেষে নিদির্ষ্ট একটি খাবারে এলার্জির সমস্যা থাকতে পারে।এতগুলো উপাদানের ফলে সাধারণত একজন মানুষের এলার্জির সমস্যা হয় না।

পেশাগত অভিজ্ঞতায় দেখেছি, ইলিশ মাছ সরাসরি এলার্জির জন্য দায়ী নয়। তবে চিংড়ি মাছে এলার্জি হতে পারে। খোসা জাতীয় মাছ যেটাকে ইংরেজিতে শেল ফিস বলে এসবে সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

দুধে এলার্জি থাকে। বিশেষ করে গরুর দুধে। যখন গরুকে কোনো কারণে চিকিৎসা দিতে হয় তখন যে দুধ পাওয়া যায় সেখান থেকে এলার্জি হতে পারে। চিকিৎসা বলতে বোঝানো হচ্ছে, যদি গরুটিকে পেনিসিলন জাতীয় এন্টি বায়োটিক দিতে হয় তখন এটির প্রভাব দুধে চলে আসে। যাদের এলার্জি আছে তারা ওই দুধ খেলে তার এলার্জির সমস্যা হতে পারে।

এ ছাড়া লাল জাতীয় সবজি খেলে এলার্জির সমস্যা হতে পারে। যেমন : গাজর, মিষ্টি কুমড়া, টমেটো- এ ধরনের রঙিন সবজিতে এলার্জির সমস্যা থাকে। তাই ব্যক্তি বিশেষে কোন খাবারে এলার্জির সমস্যা হচ্ছে সেটি জানতে হবে এবং সেভাবেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ মতো চলতে হবে।

এলার্জি থেকে বাঁচার ঘরোয়া উপায়!

এলার্জির যন্ত্রণা ভুক্তভোগীরাই জানেন।  অনেকের জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে এটি। শুধু এলার্জির ভয়ে সুস্বাদু সব খাবার সামনে রেখেও খেতে পারেন না। যার কারণে ভুগতে হয় পুষ্টিহীনতায়। আর চুলকানির বিড়ম্বনা তো রয়েছেই।

চিংড়ি, গরুর মাংস, ইলিশ কিংবা গরুর দুধ খেলে শুরু হয় গা চুলকানি বা চামড়ায় লাল লাল চাকা হয়ে ফুলে ওঠা। এগুলো হলো আপনার এলার্জি থাকার লক্ষণ।  তবে এ থেকে মুক্তি পেতে অনুসরণ করুন ঘরোয়া উপায়টি। যা সারাজীবনের জন্য বিদায় জানাতে পারেন এলার্জিকে। চলুন তাহলে জেনে নেয়া যাক উপায়টি- ভালো করে  ১ কেজি নিম পাতা রোদে শুকিয়ে নিন। শুকনো নিম পাতা পাটায় পিষে গুঁড়ো করুন এবং তা ভালো করে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন একটি কৌটায় ভরে রাখুন। এক চা চামচের ৩ ভাগের ১ ভাগ নিমপাতার গুঁড়া এবং ১ চা চামচ ইসবগুলের ভুষি ১ গ্লাস পানিতে আধা ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখুন। আধা ঘণ্টা পর চামচ দিয়ে ভালো করে নাড়ুন।

প্রতিদিন সকালে খালি পেটে, দুপুরে ভরা পেটে এবং রাতে শোয়ার আগে খেয়ে ফেলুন। ২১ দিন একটানা খেতে হবে। কার্যকারিতা শুরু হতে ১ মাস লেগে যেতে পারে। এরপর থেকে এলার্জির জন্য যা যা খেতে পারতেন না, যেমন- হাঁসের ডিম, বেগুন, গরুর গোশত, চিংড়ি, কচু, কচুশাক, গরুর দুধ, পুঁইশাক, মিষ্টি কুমড়াসহ অন্যান্য খাবার খান। আর সমস্যা হবে না।

আপনার শিশুকে ছোট থেকেই সব ধরনের খাবার, ফল ও সবজি খাওয়ানোর অভ্যাস করান। পারলে গরুর দুধও খাওয়ান একেবারে ছোট থেকে। এর ফলে, খাদ্যজাত এলার্জির হাত থেকে অনেকটাই মুক্ত থাকবে সে।

Media PlantAuthor posts

Avatar for Media Plant

Media Plant is an Entertainment Movies, Drama, Funny Video, Shorts Video, Interviews, Songs, Poem, Story, Vlog, Caller Tunes, Fashion, News, Treatment, Online Shopping and Media House in Bangladesh. মিডিয়া প্ল্যান্ট বাংলাদেশের একটি বিনোদন এবং মিডিয়া হাউস।

Comments are disabled.